কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক আমীরুল আরহাম
ফ্রান্সের Etoile de la SCAM পুরস্কৃত চলচ্চিত্রকার আমীরুল আরহাম প্যারিস প্রবাসী কবি । ফ্রান্স ও ইউরোপিয়ন টেলিভিশন সহ নানান দেশে তাঁর প্রচারিত ছবি পৃথিবীর বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে। ২০১৯ -এ ক্যান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমা পসিটিভ সেকশনে তাঁর ছবি Social Business নির্বাচিত হয় এবং প্যারিস সহ ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হয়। চলতি বছরে তাঁর শেষ ছবি Antemanha কোভিডের কারণে সম্প্রচারে ব্যহত হয়েছে। বর্তমানে তিনি প্রত্যাবর্তন ও ইন্টিগ্রেশন দুটি ছবির প্রস্তুতি পর্বে কাজ করছেন।
তাঁর Tiasci ক্লাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবিদের নিয়ে প্রতি মাসের প্রথম বুধবারে কবিতার আড্ডা দিয়ে আসছিলেন বিগত দশ বছর ধরে। কোভিডের কারণে ক্লাবটির কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ আছে। তাঁর দুটি কাব্য গ্রন্থ, বৃষ্টিতে ভিজছি, দৃষ্টিতে তোমার সমুদ্র ছায়া, ফরাসী অনুবাদ শামসুর রাহমানের কবিতা, একটি গবেষণা গ্রন্থ « The Forgotten mother language » (Sorbonne Paris V) সহ চলচ্চিত্র ও শিল্প বিষয়ক বিভিন্ন লেখালিখি আছে।
রোমানিয়ান রোমান্টিক কবি
মিহাই এমিনেস্কু
আমীরুল আরহাম
রোমানিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় রোমান্টিক কবি মিহাই এমিনেস্কুকে (১৫ জানুয়ারি ১৮৫০ – ১৫ জুন ১৮৮৯) হটাৎ করেই আবিষ্কার করেছিলাম ২০০৬ সালে, যখন Romanian Cultural Ministry এবং Alliance Français Iasi আয়োজিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে আমি ইয়াসিতে এসেছিলাম। রোমানিয়ার বুখারেস্ট থেকে 390 কিমি উত্তর-পূর্বে মোলদাভিতে অবস্থিত ইয়াসি (Iasi)শহর, এরা বলেন ঈয়াস । মোলদাভি আমাদের বাংলার মতো দুই ভাগে বিভক্ত। একটি রিপাবলিক মোলদাভি, আরেকটি রোমানিয়া মোলদাভি, যে অংশে ঈয়াস। প্রায় ৪ লক্ষ জনবসতি নিয়ে রোমানিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘনবসতি শহর ইয়াস রোমানিয়ার রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। দুবছরের (1916-1918) জন্যে রোমানিয়ার রাজধানীও ছিল। ইয়াসিকে বলা হয় The city of great loves এবং The city of seven hills.
পাহাড় বাগান লেক ও নদী প্রুত-এর এই সুন্দর শহর ঘিরে এখানে আছে বিশাল ইয়াস সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জাতীয় নাট্যশালা, যাদুঘর, ইয়াসি প্রাসাদ, বোটানিক্যাল গার্ডেন। ইহুদিদের প্রথম ঈদিশ পত্রিকা এখান থেকেই প্রকাশিত হয়, এখানেই সতেরো শতাব্দীর প্রথম সেনেগগ যা এখনো একইভাবে সক্রিয়। ইয়াসি ১২টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ হাজার পড়ুয়ার শহর। ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত Alexandru loan Cuza বিশ্ববিদ্যালয় সহ এখানে পৃথিবী বিখ্যাত পাবলিক ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিন এন্ড ফার্মেসি Grigore T.Popa পৃথিবীর নানা দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত।
আমাদের দুই বাংলায় অসংখ্য মানুষ আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় দুষিত পানীয় জল খেয়ে রোগাক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন এবং আজো যাচ্ছেন, তাদেরকে নিয়েই আমার ছবি, ফ্রান্স টেলিভিশন প্রযোজিত The Devil’sWater বিকেলে ছবি দেখাতে এসে লক্ষ্য করলাম যে এখানে লোক ভর্তি বড়ো একটা সিনেমা হলের অধিকাংশই ছাত্র-ছাত্রী, যাদের অধিকাংশই আবার এনভায়রনমেন্ট আক্টিভিস্ট। নানান রঙিন ফ্ল্যাগে ফেস্টুনে ও স্লোগানে টাঙ্গানো ব্যানার চারিদিকে। অনেক দেশের অনেক ছবি দেখানো হচ্ছে। নানান দেশ থেকে অনেক চলচ্চিত্রকার এবং চলচ্চিত্র কর্মী এসেছেন। সেই সাথে পৃথিবীর নানান দেশের পরিবেশ সচেতন কর্মী এবং বিশিষ্টজনেরাও। সারা বিকেল জুড়ে ছবি এবং চমৎকার সব আলাপ আলোচনা শেষে ইয়াসি কেন বিখ্যাত সে বিষয়ে আলাপ করার শুরুতেই একটি সুন্দরী মেয়ে একটি কবিতা « নীল ফুল” পাঠ করলেন। বললেন এই কবিতাটির মহান কবি মিহান এমিনেস্কুর শহর হল এই ইয়াস এবং তাঁর প্রিয় নদী হলো এই পাশেই বয়ে যাওয়া প্রুত। সেই প্রুত নদী নিয়ে কবিতাটির অংশ বিশেষ পড়ে শুনিয়েছিলেন ।
১৮৬৬ তে এমিনেস্কুর শিক্ষক অ্যারন পুমনুল মারা গেলে, তিনি “জিম্নেশিয়া ছাত্রের ক্রন্দন”নামে একটি কবিতা লেখেন। ছাত্রবস্থায় ১৬ বছর বয়সে এমিনিস্কুর এটাই ছিল প্রথম কবিতা। পরবর্তীতে সাহিত্য পত্রিকা “ফামিলিয়া ইন পেস্ট” পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়।
১৮৬৭ তে “লরগু ক্যারাগিয়াল” একটা থিয়েটার কোম্পানিতে কেরানি এবং প্রোমোটার হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত অনেকগুলো থিয়েটার কোম্পানির সাথে তাঁর ভালো যোগাযোগ গড়ে উঠে এবং তিনি বুকারেস্টে চলে আসেন। এখানে তিনি বুকারেস্ট ন্যশনাল থিয়েটারের কেরানী এবং কপিলেখক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু পাশাপাশি তিনি নিয়মিত কবিতা লিখতে থাকেন। এন্রিক থেওডর রশশের লেখা অনুবাদ করে তিনি তাঁর ঘর ভাড়া দিতে থাকেন। সেই সাথে তাঁর প্রথম উপন্যাস Geniu pustiu (Wasted Genious) লেখেন।
১৮৬৯ সনে এমিনেস্কু ভিয়েনায় দর্শন ও আইন নিয়ে পড়তে আসেন। ছাত্র অবস্থায় এমিনেস্কু ‘ভ্যারো’ছদ্মনামে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে তিনটি নিবন্ধ লেখেন যার সুবাদে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর (ভ্যারো) পরিচিতি বাড়তে থাকে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি আলবিনা পত্রিকার সাংবাদিক হন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র এবং কবি হিসেবেও এসময়ে এমিনেস্কুর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াসি থেকে চিকিৎসার জন্যে স্বামীর সাথে ভেরোনিকা মিকেল ভিয়েনায় এসেছিলেন। কবিতা এবং সাহিত্য আলোচনার ভিতর দিয়ে দুজনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। লেখালিখি এবং সাংবাদিকতার মধ্যেও ভেরোনিকার সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ক্রমশ গভীর হয়ে উঠে। তাঁর কবিতায় প্রেম রোমান্টিকতা ছন্দ উপমা উৎপ্রেক্ষা বিশেষ একটা স্বাতন্ত্র্যতা পায়, রোমানীয় সাহিত্যে যেটি প্রথম।
দুবছর ভিয়েনায় পড়া শেষে তিনি জুনিমিয়ার দেওয়া উপবৃত্তি নিয়ে ১৮৭২ থেকে ১৮৭৪ এ বার্লিনে পড়াশুনা করতে যান। কিন্তু ভেরোনিকার জন্যে ইয়াসিতে ফিরে আসার জন্যে তিনি অস্থির হয়ে উঠেন। এই সময়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির পরিচালকের কাজ নিয়ে তিনি ইয়াসিতে চলে আসনে। এবং নিয়মিত ভাবে ভেরোনিকের সাথে সাহিত্য আড্ডায় মেতে উঠেন। এই সময়ে ভেরোনিকার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। স্বামী স্তেফেন মিকেল এঁদের সম্পর্ককে কিভাবে দেখেছিলেন সেটা জানা যায় না। কিন্তু তিনি সেফিলিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সেন্ট্রাল লাইব্রেরির কাজ শেষ করে এমিনেস্কু সাবস্টিটিউট শিক্ষক, ইয়াসি এবং ভাসলুইয়ের ইস্কুল ইন্সপেক্টর হিসেবেও কাজ করেন। ইয়াসিতে “দ্য কুরিয়ের” পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও এমিনেস্কু কাজ করেন। জুনিমিয়ার নেতা টিটু মাইওরেস্কু, ইয়াসি বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেক্টর, লেখক ক্রেয়াঙ্গা প্রভৃতি জনের সাথে এই সময়ে তাঁর আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
১৮৭৭ এমিনেস্কু সাংবাদিকতার চাকরি নিয়ে আবার বুকারেস্টে চলে আসেন। ভেরোনিকার স্বামী স্তেফান মিকেল ১৮৭৯ সালে মারা গেলে ওদের দুজনের সম্পর্ক আরো গভীর হয়ে উঠে। বুকারেস্ট থেকে প্রায় সময় এমিনেস্কু ইয়াসিতে ফিরে ভেরোনিকের সাথে থাকতেন। ১৮৮০ সালে তিনি জুনিমিয়া সাহিত্য পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য এবং রক্ষণশীল দলের “টিম্পুল” (The Time) পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই সময়ে তিনি Scrisorile, Luceafarul, Odan metro Antic ইত্যাদি রচনা করেন। এই সময়টিতে রুশো-তুর্কি যুদ্ধে রোমানিয়া অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। ইহুদি ধর্মের সমস্ত বিষয়কে মেনে নেবার শর্তে রোমানিয়ান স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনেছিল। কিন্তু এমিনেস্কু এমন সব শর্তের বিরোধিতা করেছিলেন। রোমানিয়ার কৃষ্ণ সাগরের পূর্বে দব্রুদজার পরিবর্তে দক্ষিণ বেসরবিয়া রাশিয়াকে দেবার বার্লিন চুক্তির এই শর্তকেও তিনি মেনে নিতে পারেন নি। দক্ষ একজন সাংবাদিক হিসেবে রাজনীতি মহলে তাঁর প্রভাব ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৮৮০ তে এমিনেস্কু ভেরোনিকা বিয়ে করে একসাথে থাকবার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু দুভাগ্যক্রমে এমিনেস্কুর শরীর খারাপের জন্যে সেটা হয়ে উঠলো না। এই সময়ে ভেরোনিকা এমিনেস্কুকে একগুচ্ছ কবিতা "প্রিয়প্রাণ এমিনেস্কুকে অপ্রতিরোধ্য প্রেম" উপহার দেন। ১৮৮১ থেকে এমিনিস্কু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে অস্ট্রিয়া এবং ইতালিতে ট্রিটমেন্ট করা হয় এবং তিনি সাময়িক সুস্থ হয়ে উঠেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবারো তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দেয় এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৮৮৬ তে রোমানিয়ন ডাক্তার জুলিয়ান বোগদান এবং ডাক্তার প্যানে জসিন কবি এমিনিস্কু সেফিলিস রোগে ভুগছেন বলে শনাক্ত করেন এবং তাঁকে তাঁরা পারদ দিয়ে চিকিৎসা করেন। ১৮৮৯ ফেব্রুয়ারিতে এমিনেস্কুকে সানাটরিয়াম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাঃ আইজ্যাক এবং ডাঃ আলেক্সজান্দ্রু তাঁর দেহে মার্কারি ক্লোরাইড ইঞ্জেকশান দেন এবং কবি কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৯ বছর। জানা যায় যে মৃত্যুর আগে তিনি এক গ্লাস দুধ খেতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর শেষ উচ্চারণ ছিল"আমি মারা যাচ্ছি।
এমিনেস্কুর এই অকাল মৃত্যুকে ভেরোনিকা কোনমতেই মেনে নিতে পারেননি। ভারাটেকের মঠে তিনি সন্যাস জীবন যাপন করতে চলে যান। এখানেই তিনি মাত্র ৪৮ দিন পরেই ৩ অগাস্টের রাতে এক শিশি আর্সেনিক বিষ পান খেয়ে কবি ভেরোনিকা মিকেল (২২ এপ্রিল ১৮৫০- ৩ অগাস্ট ১৮৮৯) আত্মহত্যা করেন।
প্রেম কি ? ভেরোনিকা তাঁর এক লেখায় এভাবেই বলেন যেপ্রেম হলো এক সুদীর্ঘ সময়ের অস্থির যন্ত্রণা। লক্ষকোটি অশ্রুবিন্দুতেও যে সন্তুষ্ট নয়, তার সীমাহীন প্রয়োজনকেও সে অতিক্রম করতে চায়। প্রেম এমনই একটা অলৌকিক বন্ধন যে তার পাশ কাটিয়ে যাবার সময়ও হৃদয়কে সে এমন করে ছুঁয়ে রাখে যে, সমস্ত জীবন ধরেও সেটি আর ভুলতে পারা যায় না এমিনেস্কুর মৃত্যু রহস্য নিয়ে নানান প্রশ্নের মিমাংসা আজোবধি হয়নি। রোমানিয়ান মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড একাদেমির সভাপতি প্রফেসর ডাঃ ঈরিনেল পপেস্কু পরবর্তীতে জানান যে পারদ দিয়ে চিকিৎসা করা উনিশ শতক থেকেই ইউরোপে নিষিদ্ধ, এবং এটাকে তিনি চিকিৎসকের অযোগ্যতা এবং অজ্ঞতা বলে অভিহিত করলেও আজোবধি অধিকাংশ রোমানিয়ানরাই মনে করেন যে রাজনৈতিক মতবাদের কারণে এমিনেস্কুকে হত্যা করা হয়েছে।
২৮শে জুন ১৯২৬, ইয়ুনিভারসাল পত্রিকায় বলা হয় যে এমিনেস্কুর পাশের একজন মানসিক রুগী,ক্রায়ভা স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, পিটার পোনারু, বোর্ড দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করলে তিনি তৎক্ষণাৎ মারা যান।
২৫ জানুয়ারি ১৯০২ এমিনেস্কুর মৃত্যুর ১৩ বছর পরে তাঁর ৪৬ খণ্ডের ১৪০০০ পৃষ্ঠার সমস্ত পাণ্ডুলিপি রোমানিয়ান একডেমিকে দেওয়া হয়। এমিনেস্কু তাঁর কবিতায় প্রায়শই রূপক, পৌরাণিক, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক তথ্যকে আশ্রয় করেছেন।
কবির দুটি কবিতা.....
নীল ফুল
তারার জালে ভাসছো তুমি ঘুরে ঘুরে
অন্তহীন মেঘ, আকাশ শূন্য নীল
হে হৃদি জীবন আমার, স্বপ্নিল
বিচ্ছেদ-পর্দা তুলে রাখো দূরে
সৌর সমুদ্রে বৃথায় দিচ্ছ সাঁতার
নিজের ভরে উপচে পড়ছে ভুল
খুঁজছো সফেন সাগর দুর্গন্ধময়
ঘুরছো মিছে সমভূমি আশেরিয়ার
উঁচুতে স্বর্গীয় মেঘের অন্ধকার
রেখেছে ধরে পিরামিডের অহংকারী গম্বুজ
সুখের সন্ধানে হয়ো না অবুঝ, ওগো প্রিয়তমা
হবে না ঠিক অতো দূরে উপরে উঠার ।
সুন্দরী বলেছিল এভাবেই মনে মনে
মাথায় হাত রেখে নরম আদরে
হাসিটুকু ছাড়া রা ছিলোনা আমার
মুখে, সুখ ছিল তার সত্য উচ্চারণে
আনন্দঘন বনে শোন ঝর্ণার ক্রন্দন
শীতল স্ফটিক জলে ঝুলন্ত শিলা
ভাগ্য ক্ষণিকের, বজ্রপাতে সমতলে
সবুজ বনজ ভূমিতে ভাঙছে বন্ধন
কচি ঘাসের ভিতর মৃদু অভিমান
মৃদুল বাতাসে ঝরছে গাছের পাতা
জাম কুড়াতে কুড়াতে অবান্তর কতকথা
স্নিগ্ধ ছায়ায় মুগ্ধ মায়ায় ছুঁয়ে আছি প্রাণ
রূপকথার গল্প শোনাবে তোমার সব জানা
মিথ্যাগুলো ফিসফিসাবে কানে
কষ্টি পাথর দিয়ে চিনে নেবো সোনা
ভালো তুমি বাসো, কিংবা না-বাসো কিনা
প্রখর সূর্যের তাপে পুড়িয়ে নিয়েছি মুখ
লাল আপেল চিবুকে আছে লেগে
সোনালি চুল উড়িয়ে দিয়েছি আজ
তোমাকে দিয়েছি ঢেকে তোমার যতো দুখ
যখন ঠোঁটে তুমি জ্বালাও আগুণ আধার
পৃথিবী জানতেও পারবে না কোনদিন
নীলাকাশ ছায়ায় লুকাবো দুজন
পূর্ণ স্বাধীনতা শুধু তোমার আমার
রাতের অন্ধকারে যখন উঠবে ঝলমলে চাঁদ
তোমার দুবাহুতে জাগিয়ে তুলো আমায়
তোমার দুবাহুতে ঢেকে রেখো আমায়, প্রিয়তমা
গলা জড়িয়ে তালি দিয়ে জাগিয়ে রাখবো রাত
গোধূলি বেলায় আলোছায়া নামবে যখন
গ্রামের ধুলো পথ ছেড়ে ঝর্ণায় ভিজবে চরণ
কুড়িয়ে নেবো পরস্পরের আলিঙ্গন আর
লুকানো ভায়োলেট ফুলের সুগন্ধি চুম্বন
শুক্লা একাদশীর মৃদু আলোয়, বাগানে
ভরে উঠবে রঙিন প্রেম আকাশ জুড়ে
দুজন দুজনের মুখোমুখি সমুদ্রে সেদিন
বইবে বাতাস আলাপন গোপন নির্জনে
হায় প্রেম ! ফিরে যাচ্ছ চুপি চুপি মিষ্টি চুম্বন শেষে
আমি দাঁড়িয়ে আছি স্তম্ভিত শোকের স্রোতে
আমার ছোট্ট নীল ফুল, কোমল কুসুম আমার
ফিরছো তুমি সূর্যের গভীরে অন্ধকারে অবশেষে!
যেয়ো না, সখী!
যেয়ো না, সখী! সাথে থাকো
তোমাকে অনেক ভালোবাসি
তোমার কামনা বাসনা শুধু
আমিই বুঝি, লুকানো হাসি।
তোমার ভালোবাসার রাজপুত্র
যমুনার অন্ধকার ছায়ায়
গভীর নীল জলের তলে
তাকিয়ে আছে মরমী মায়ায়।
থাকো, ভাঁজ করা ক্ষুদ্র তরঙ্গে
মৃদু বাতাসে কাশের কাঁপন
শোনাবো তোমাকে পায়ের শব্দ
পাহাড়ি ছাগলের ভীতু পলায়ন।
কী সুন্দর, অপরূপ তুমি, সখী !
স্বল্প মৃদু কণ্ঠে মিষ্টি কথা চিকন ভুরু
জলের তলে আলোর ঝিলিক
জ্বলছে তোমার নরম সরু নগ্ন উরু।
পূর্ণিমা চাঁদের মধ্যে আর
হ্রদে আগুনের শিখায় দেখবো তোমায়
বছরগুলো শুধুই স্থবির সময়
মিলন মুহূর্তগুলি শতবর্ষের মনে হয়।
মৃদু স্বরে ডাকছে ঘন বন
গাছের পাতা-ডালে ধনুকি খিলান
শিষ দিলাম তার ডাকে
হাসতে হাসতে মাঠে ফিরে গেলাম
এখনো আমি সে দেশেই ঘুরছি
কিন্তু কোথায় তোমার বাল্যকাল, শৈশব
খুঁজে পাচ্ছি না, বুঝছি-না কিছুই
কোথায় সেই বন, সেতু এবং আর সব !
অনুবাদঃ আমীরুল আরহাম
Comments
Post a Comment